পঞ্চগড়ের সফিকুলের নাম দেশবাসীর মুখে মুখে। কারণ সে এবার ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় স্থান করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। অথচ কখনও দুবেলা দুমুঠো পেট ভরে খাবার পায়নি। এক কাপড়ে কেটেছে, অসুস্থ মায়ের চিকিৎসা করাতে ব্যর্থ হয়েছে বার বার। পরিবারের ছয় সদস্য নিয়ে গাদাগাদি করে জরাজীর্ণ ঘরে সে রাত কাটাতো। অবশ্য পরিবারটি 'দশ টাকা কেজি চাল' কর্মসূচির আওতায় ছিল। আর এর মধ্যেই সফিকুল স্বপ্ন দেখতো সে ডাক্তার হবে, অসুস্থ মাকে সুস্থ করে তুলবে, সাথে সাথে গ্রামবাসীর সেবা করবে।
কোন কিছুর প্রয়োজন পূরণের বিশেষ তাগিদ অনুভব করা হলো চাহিদা।
চাহিদা হলো অবশ্য পূরণীয় প্রয়োজন। নিজের জীবন রক্ষার জন্য মানুষকে যেসব প্রয়োজন অবশ্যই পূরণ করতে হয় সেসবই চাহিদা। মানুষের দৈহিক, মানসিক, আর্থিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক প্রয়োজন চাহিদার মধ্যে পড়ে। প্রকৃতপক্ষে, মানুষের চাহিদার কোন অন্ত নেই।
উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত মৌল মানবিক চাহিদা হিসেবে বস্ত্রের গুরুত্ব অপরিসীম।
বস্ত্র মানবজীবনের জন্য অপরিহার্য মৌল মানবিক চাহিদা। এটি মানুষের লজ্জা নিবারণ করে। মানুষের ব্যক্তিত্ব এবং চরিত্রের বিকাশে বস্ত্রের গুরুত্ব অত্যধিক। মানবসভ্যতার প্রথম নির্দেশক হিসেবে বস্ত্রই মানুষকে অন্যান্য প্রাণী থেকে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা দান করেছে। এটি সভ্যতা ও সংস্কৃতির পরিচায়ক। তাছাড়া এটিই মানুষকে শীত, তাপ, ধুলোবালি, রোগ-জীবাণু প্রভৃতি থেকে রক্ষা করে। উদ্দীপকের হাসনা ও তার ছোট দুই ভাই-বোনের প্রয়োজনীয় শীতের পোশাক নেই। ফলে তারা শীতকালে ঠান্ডায় কষ্ট পায় এবং বিভিন্ন ধরনের সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়। এ থেকে বোঝা যায়, উদ্দীপকে মৌল মানবিক চাহিদা বস্ত্রের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
আর্থিক কারণে বাংলাদেশের সব শ্রেণির মানুষের পক্ষে বস্ত্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক মানবিক চাহিদা যথাযথভাবে পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমান পরিস্থিতির আলোকে বক্তব্যটির যথার্থতা রয়েছে।
মৌল মানবিক চাহিদাগুলোর মধ্যে খাদ্যের পরেই বস্ত্রের স্থান। বস্তু সভ্যতার সর্বপ্রথম নির্দেশক। কিন্তু এ খাতে আমাদের দেশের বার্ষিক গড় কাপড়ের চাহিদা অনুযায়ী অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। এর কারণ হিসেবে ত্রুটিপূর্ণ বজ্রনীতি, বস্ত্রখাতের অনিয়ম, প্রতিকূল পরিবেশ, দুর্ঘটনা, উৎপাদন হ্রাস ইত্যাদিকে চিহ্নিত করা হয়। অনুমান করা হয়, মাথাপিছু বার্ষিক গড়ে ১০ মিটার কাপড়ের ব্যবহার জরুরি হলে ১৫ কোটি ৮৯ লাখ জনসংখ্যার জন্য ১৫৮.৯ কোটি মিটার কাপড়ের প্রয়োজন হবে। অথচ মে ২০১২ তে প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান পকেট বুক এর তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশে মাথাপিছু বার্ষিক পুরাতন কাপড় প্রাপ্তি ০.০৩ মিটার এবং নতুন কাপড় ১৫.৭ মিটার। অর্থাৎ বাংলাদেশে বস্ত্রের সরবরাহ চাহিদার তুলনায় কম হওয়ায় প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণ পুরনো কাপড় বিদেশ থেকে আমদানি করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের দরিদ্র জনগণ প্রয়োজনীয় বস্ত্রের চাহিদা পূরণ করতে পারেনা। এখনও গ্রামের গরিব কৃষক একটি লুঙ্গি ও গেঞ্জি পরে এবং গ্রামের দরিদ্র নারী একটি মোটা কাপড় পড়ে বছর পার করে দেয়। বস্ত্রের অভাবে গ্রাম ও শহরের অসংখ্য দরিদ্র ও দুস্থ মানুষ শীত ও গ্রীষ্মকালে প্রতিকূল পরিবেশে মানবেতর জীবনযাপন করছে। যার চিত্র হাসনা ও তার পরিবারের মাধ্যমে উদ্দীপকে ফুটে উঠেছে। সামগ্রিক আলোচনার প্রেক্ষিতে তাই বলা যায়, বাংলাদেশের সব শ্রেণির মানুষের পক্ষে বস্ত্রের চাহিদা যথাযথভাবে পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না- বক্তব্যটি সঠিক।
পৃথিবীতে বেঁচে থাকা এবং শারীরিক বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশ ঘটাতে হলে খাদ্যের প্রয়োজন। তাই মানবজীবনের সবচেয়ে প্রথম ও প্রয়োজনীয় চাহিদা হলো খাদ্য।
খাদ্য বলতে ঐসব বস্তু বা দ্রব্যকে বোঝায় যা শরীরে হজম হয় এবং শরীরের বৃদ্ধি ও কর্মশক্তি যোগানে সাহায্য করে। খাদ্য না খেলে মানুষের স্বাভাবিক জ্ঞান ও বুদ্ধি লোপ পায়। খাদ্য ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না